দুনিয়ার দুঃখ দুঃখই না, জাহান্নামের দুঃখই আসল দুঃখ

প্রতিটি জীবকে মরতে হবে, আমি চাই বা না চাই, এদুনিয়া ছেড়ে যেতেই হবে, আসুন দুনিয়ায় থেকে আসল জিন্দিগি কবর, হাশর ও জান্নাতের পাথেয় সংগ্রহ করি।

দুনিয়ার সুখ সুখ না, জান্নাতের সুখই আসল সুখ

হযরত আনাস ইবনে মালেক (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি আমাকে দেখেছে এবং আমার উপর ঈমান এনেছে তার জন্য তো একবার মোবারকবাদ। আর যে আমাকে দেখে নাই তারপরেও আমার উপর ঈমান এনেছে তাকে বারবার মোবারকবাদ - মুসনাদ আহমাদঃ ৩/১০০

কালেমা পড়ি, ঈমান আনি, বলি আমি মুসলিম

“ তোমরাই শ্রেষ্ঠ উম্মত, মানুষের(কল্যাণের) জন্য তোমাদেরকে বের করা হয়েছে। তোমরা মানুষকে সৎ কাজের আদেশ করবে এবং অসৎকাজ থেকে নিষেধ করবে।” -সূরা আল-ইমরান, আয়াত-১১০

দুনিয়া ক্ষনস্থায়ী, নিশ্চই আমিও দুনিয়ায় ক্ষনস্থায়ী

“ রাসুলে পাক (সা:) বলেছেন, আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমার উম্মতের উপর সর্বপ্রথম নামাজ ফরজ করেছেন এবং কেয়ামতের দিন সবার আগে নামাজের হিসাব নয়া হবে।ে।” -সূরা আল-ইমরান, আয়াত-১১০

নামাজ বেহেস্তের চাবি

হযরত আনাস ইবনে মালেক (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি আমাকে দেখেছে এবং আমার উপর ঈমান এনেছে তার জন্য তো একবার মোবারকবাদ। আর যে আমাকে দেখে নাই তারপরেও আমার উপর ঈমান এনেছে তাকে বারবার মোবারকবাদ - মুসনাদ আহমাদঃ ৩/১০০

Friday, April 17, 2015

আয়াতুল কুরসি, Quran Ayatul Kursi

Dua Qunoot, দুয়া কুনুত

Saturday, March 28, 2015

সালাতুত তাসবিহ নামাজ পড়ার নিয়ম ও পদ্ধতি

সালাতুত তাসবিহ নামাজ পড়ার নিয়ম ও পদ্ধতি

মুফতি মুহাম্মদ আল আমিন

হাদিস শরিফে এসেছে, রাসুল (সা.) তাঁর চাচা হজরত আব্বাস (রা.)-কে বলেছিলেন, ‘চাচা, পারলে আপনি সালাতুত তাসবিহ নামাজ সপ্তাহে একবার, তাও না পারলে মাসে একবার, তাও না পারলে বছরে একবার পড়বেন। অন্তত জীবনে একবার হলেও নামাজ পড়বেন। নামাজ দ্বারা জীবনের ছগিরা, কবিরা, ইচ্ছাকৃত, অনিচ্ছাকৃত, নতুন, পুরনো, গোপন, প্রকাশ্য_সব রকম গুনাহ মাফ হয়ে যায়।
এখন সালাতুত তাসবিহ নামাজ পড়ার নিয়মাবলি আমরা জেনে নিতে পারি। সালাত শব্দের অর্থ নামাজ। আর তাসবিহ শব্দের অর্থ এখানেসুবাহানাল্লাহ, ওয়াল হামদুলিল্লাহ, ওয়ালা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, ওয়াল্লাহু আকবার’_এই তাসবিহকে বোঝানো হয়েছে। সুতরাং যে নামাজে তাসবিহ পড়া হয় তাকে সালাতুত তাসবিহ নামাজ বলে। নামাজ হলো চার রাকাত। প্রতি রাকাতে উপরিউক্ত তাসবিহ ৭৫ বার পড়তে হয়। তাহলে চার রাকাতে ৩০০ বার হয়।
সালাতুত তাসবিহ নামাজ পড়ার দুটি নিয়ম আছে।
প্রথম নিয়ম হলো :
প্রথমে নিয়ত করবে, আমি চার রাকাত সালাতুত তাসবিহ নফল নামাজ পড়ার নিয়ত করলাম। এরপর ছানা অর্থাৎ সুবহানাকাল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা_এটা পড়বে। এরপর যেকোনো সুরা মেলাবে। সুরা শেষ করে ওই দাঁড়ানো অবস্থায়ই ১৫ বার তাসবিহ পাঠ করবে। এরপর আল্লাহু আকবার বলে রুকুতে যাবে। রুকুর তাসবিহ পড়ার পর আবার ওই তাসবিহ ১০ বার পড়বে। এরপর রুকু থেকে উঠেরাব্বানা লাকাল হামদবলার পর আবার ওই তাসবিহ ১০ বার পড়বে। এরপর সিজদায় যাবে। সিজদার তাসবিহ পড়ার পর ওই তাসবিহ ১০ বার পড়বে। সিজদা থেকে উঠে দুই সিজদার মাঝখানে আবার ১০ বার পড়বে। দ্বিতীয় সিজদায় সিজদার তাসবিহ পড়ার পর আবার ওই তাসবিহ ১০ বার পড়বে। এই হলো ৬৫ বার। এখন আবারআল্লাহু আকবারবলে দ্বিতীয় সিজদা থেকে উঠে বসে ১০ বার পড়বে। অতঃপর দাঁড়াবে। এই হলো এক রাকাতে ৭৫ বার। এবার দ্বিতীয়, তৃতীয় চতুর্থ রাকাতে একইভাবে সুরা তাসবিহ পড়তে হবে। দ্বিতীয় রাকাতে শেষ রাকাতে আত্তাহিয়্যাতু পড়ার আগে ১০ বার তাসবিহ পড়ে নিতে হবে। তারপর সালাম ফেরাতে হবে। কোনোভাবেই আত্তাহিয়্যাতুর পর তাসবিহ পড়া যাবে না এবং কোনোভাবেই প্রতি রাকাতে ৭৫ বারের বেশি পড়া যাবে না।

দ্বিতীয় নিয়ম হলো :
নিয়ত বেঁধেই ছানা পড়ার পর সুরা-কিরাত পড়ার আগেই ১৫ বার, সুরা-কিরাত শেষে ১০ বার। এখানে দাঁড়ানো অবস্থায় ১০ বারের বেশি হয়ে গেলে, এই নিয়মে পড়লে দ্বিতীয় সিজদা থেকে সোজা দাঁড়িয়ে যাবে। দ্বিতীয় সিজদাতেই ৭৫ বার হয়ে যাবে এবং আত্তাহিয়্যাতুর আগে ওই তাসবিহ পড়তে হবে না। তাসবিহ ৩০০ বার হতে হবে, কম হলে সালাতুত তাসবিহের ফজিলত পাওয়া যাবে না। তাই খুব সতর্কতার সঙ্গে পড়তে হবে। যদি কেউ কোনো এক জায়গায় তাসবিহ পড়তে ভুলে যায় বা কম থেকে যায়, তাহলে পরবর্তী সময়ে যে জায়গায় মনে আসবে, সেখানে ছুটে যাওয়াটাও আদায় করে নেবে। সালাতুত তাসবিহ যেকোনো সুরা দিয়ে পড়া যায়। তবে কেউ কেউ বলেছেন, নামাজে সুরা আসর, কাউছার, কাফেরুন ইখলাছ পড়া উত্তম। সালাতুত তাসবিহ ছাড়া এমন আরো যত নফল নামাজ আছে, তা যেকোনো সুরা দিয়ে পড়া যেতে পারে। কোনো কোনো বইপুস্তকে লেখা পাওয়া যায়, শবেবরাতে নামাজে অমুক সুরা এতবার পড়তে হয়, এটা ঠিক নয়। এসব বক্তব্য অসমর্থিত। শবেবরাতের নফল নামাজে কোনো বাধ্যবাধকতা নেই যে অমুক সুরা পড়তে হবে বা অমুক সুরা পড়া যাবে না। মনে রাখতে হবে, যেকোনো নফল নামাজে যেকোনো সুরা পড়া যায়।

লেখক : খতিব,  মোল্লাপাড়া জামে মসজিদ, দক্ষিণখান, ঢাকা

Saturday, February 28, 2015

এস্তেখারা নামাজ কি ও এর গুরুত্ব


এস্তেখারা নামাজ  কি    এর  গুরুত্বঃ  

এস্তেখারা ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল এস্তেখারা শব্দটি আরবী আভিধানিক বা শাব্দিক অর্থ কল্যাণ প্রার্থনা বা কোন বিষয়ে কল্যাণ চাওয়া ইসলামী পরিভাষায়ঃ দুরাকাত নামায বিশেষ দুয়ার মাধ্যমে আল্লাহর তায়ালার নিকট পছন্দনীয় বিষয়ে মন ধাবিত হওয়ার জন্য আশা করা অর্থাৎ, দুটি বিষয়ের মধ্যে কোনটি অধিক কল্যাণকর হবে ব্যাপারে আল্লাহর নিকট দু রাকায়াত সালাত এস্তেখারার দুয়ার মাধ্যমে সাহায্য চাওয়ার নামই এস্তেখারা (ইবনে হাজার, ফাতহুল বারী শরহু সহীহিল বুখারী)

চাকুরী, বিবাহ-শাদী, সফরে গমন, বা অন্য কোন বৈধ কাজের পূর্বে এস্তেখারা করলে পরে আর আক্ষেপ করতে হবে না সাধারনতঃ স্বপ্নের মাধ্যমেই ফলাফল বা দিক নির্দেশনা পাওয়া যায়, বৈধ কাজের সিদ্ধান্ত গ্রহনের ব্যাপারে যদি ভালো স্বপ্ন দেখেন, সরাসরি দিক নির্দেশনা পান, সাদা বা সবুজ রঙ দেখেন অথবা ঘুম থেকে উঠার পর মন-মেজাজ অনেক ভালো থাকে বা ফুরফুরে থাকে, তবে আপনার জন্য বিষয়টি মঙ্গলজনক হতে পারে আর যদি এগুলির বিপরীত হয়, লাল বা কালো রঙ দেখেন, তবে বিষয়টি অমঙ্গলজনক হতে পারে (স্বপ্নের ব্যাখ্যা অবশ্যই একজন আলেমের মাধ্যমে যাচাই করে নিতে হবে)

এস্তেখারা করার হুকুমঃ  এটি সুন্নাত যা সহীহ বুখারীর হাদীস দ্বারা প্রমাণিত
আল্লাহ তায়ালা বলেন, “আর তুমি সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে মানুষের সাথে পরমর্শ কর অতঃপর আল্লাহর উপর ভরসা করে (সিদ্ধান্তে অটল থাক) আল্লাহ ভরসাকারীদেরকে পছন্দ করেন“ [সূরা আলে ইমরান: ১৫৯]
আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন, “তোমরা স্বীয় প্রতিপালককে ডাক, কাকুতি-মিনতি করে সংগোপনে“ [সূরা আরাফঃ ৫৫]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “আদম সন্তানের সৌভাগ্যের বিষয়সমূহ থেকে একটি হল এস্তেখারা করা আল্লাহর ফয়সালার উপর সন্তুষ্ট থাকা আর মানুষের দুর্ভাগ্য হল এস্তেখারা না করা আল্লাহর ফয়সালার উপর অসন্তুষ্ট থাকা “ [আহমাদ ১৩৬৭]
এস্তেখারার ব্যাপারে কয়েকজন সাহাবা বুজুর্গের মন্তব্যঃ
) উমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) বলেন, “আমার সকালটা আমার কাঙ্ক্ষিত অবস্থায় না কি অনাকাঙ্ক্ষিত অবস্থায় হল তা নিয়ে আমি ভাবি না কারণ, আমি জানি না কল্যাণ কোথায় নিহিত আছে; যা আমি আশা করি তাতে না কি যা আমি আশা করি না তাতে
) সাদ ইবনে আবী ওয়াক্কাস (রা.) বলেন, “আল্লাহর নিকট এস্তেখারা করা আদম সন্তানদের সৌভাগ্যের বিষয় অনুরূপভাবে আল্লাহর ফয়সালায় সন্তুষ্ট থাকাও তাদের সৌভাগ্যের বিষয় পক্ষান্তরে আল্লাহর নিকট এস্তেখারা না করা আদম সন্তানদের দূর্ভাগ্যের বিষয় অনুরূপ ভাবে আল্লাহর ফয়সালায় অসন্তুষ্ট হওয়াও তাদের দূর্ভাগ্যের বিষয়
) ইমাম নওবী (রহঃ) বলেন, “আল্লাহ তায়ালার নিকট এস্তেখারা করার পাশাপাশি অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ভাল লোকদের পরামর্শ গ্রহণ করা দরকার কারণ, মানুষের জ্ঞান-গরীমা অপূর্ণ সৃষ্টিগতভাবে সে দূর্বল তাই যখন তার সামনে একাধিক বিষয় উপস্থিত হয় তখন কি করবে না করবে, বা কি সিদ্ধান্ত নিবে তাতে দ্বিধায় পড়ে যায়
) শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া (রহঃ) বলেন, “সে ব্যক্তি অনুতপ্ত হবে না যে স্রষ্টার নিকট এস্তেখারা করে এবং মানুষের সাথে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নেয় এবং তার উপর অটল থাকে
) কাতাদা (রহঃ) বলেন, “মানুষ যখন আল্লাহ তায়ালা সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে পরষ্পরে পরামর্শ করে তখন আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে সব চেয়ে সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছার তওফীক দেন
এস্তেখারা করার নিয়ম বা পদ্ধতিঃৃ
এস্তেখারা নিয়ম হলো, ঘুমানোর আগে ভালোভাবে ওজু করে, প্রথমে দুই রাকাত নফল নামায পড়বেন যদি আপনি এই আশংকা করেন যে, এস্তেখারা নামাজ পড়ে ঘুমালে ঘুম থেকে উঠে আর বেতর পড়ার সুযোগ না পেতে পারেন, তবে আগে বেতর পড়ে নিলে অসুবিধা হবেনা যেহেতু বেতর ওয়াজিব, নফলের জন্য তো আর সেটা কাযা করা যাবেনা
এস্তেখারার নামাজের পর দোয়াঃ
নামাজ আদায়ের পর, মনোযোগের সাথে বার নিচের এই দোয়া পাঠ করবেন

اَلّلهُمَ إِنّيِ أَسْتَخِيْرُكَ بِعِلْمِكَ وَ أَسْتَقْدِرُكَ بِقُدْرَتِكَ وَأَسْأَلُكَ مِنْ فَضْلِكَ الْعَظِيْمِ فَإِنَّكَ تَقْدِرُ وَلَا أَقْدِرُ وَ تَعْلَمُ وَلَا أَعْلَمُ وَأَنْتَ عَلَّامُالْغُيُوْبِ ، اَلّلهُمَ إِنْ كُنْتَ تَعْلَمُ اَنَّ هذَا الْاَمْرَ خَيْرٌ لِىْ فِيْ دِيْنِيْ وَمَعَاشِىْ وَ عَاقِبَةِ اَمْرِىْ فَاقْدِرْهُ لِيْ وَيَسِّرْهُ لِيْ ثُمَّ بَارِكْ لِيْ فِيْهِ ،وَ اِنْ كُنْتَ تَعْلَمُ اَنَّ هذَا الْاَمْرَ شَرٌ لِىْ فِيْ دِيْنِيْ وَمَعَاشِىْ وَ عَاقِبَةِ اَمْرِىْ فَاصْرِفْهُ عَنِّىْ وَاصْرِفْنِىْ عَنْهُ وَاقْدِرْ لِىَ الْخَيْرَ حَيْثُ كَانَثُمَّ اَرْضِنِىْ بِه - [বুখারী, ২য় খন্ড, হাদিস নং: ২৬৩ ]
দোয়ার মধ্যে যখন هذَا الْاَمْرَ বলবেন, তখন সেই কাজের কল্পনা করবে যে কাজের জন্য এস্তেখারা করা হচ্ছে
অর্থঃ হে আল্লাহ ! আমি আপনার জ্ঞানের মাধ্যমে আপনার কাছে কল্যাণ প্রার্থনা করি, আপনার শক্তির মাধ্যমে আপনার কাছে শক্তি প্রার্থনা করি এবং আপনার মাহান দয়া প্রার্থনা করি কেননা আপনি শক্তিমান, আমার কোন শক্তি নাই আপনি জানেন আমি জানি না আপনি অদৃশ্যের বিষয় সম্পর্কে সবিশেষ জ্ঞাত হে আল্লাহ! যদি আপনার জ্ঞানে কাজটি আমার ইহকাল পরকালের জন্য মঙ্গলজনক হয়, তবে এটি আমার জন্য অবধারিত করুন, অতঃপর এতে বরকত দান করুন আর যদি আপনার জ্ঞানে কাজটি আমার ইহকাল পরকালের জন্য অনিষ্টকর হয় তবে কাজকে আমা থেকে এবং আমাকে কাজ থেকে দূরে রাখুন এবং আমার জন্য মঙ্গল অবধারিত করুন, তা যেখানেই থাকুক না কেন অতঃপর তাতে আমাকে সন্তুষ্ট রাখুন (অর্থ সুত্রঃ মালাবুদ্দা মিন"হু)
নামাজ দুয়ার পর, মোনাজাত শেষে পাক-পবিত্র বিছানায় অযু অবস্থায় শুয়ে যিকির করতে করতে, দরুদ শরীফ পড়তে পড়তে আর আপনি যেই বিষয়ের ব্যাপারে এস্তেখারা করছেন সে বিষয়টা মাথায় রেখে ডান কাতে কেবলামুখী হয়ে (পশ্চিম দিকে মুখ করে) ঘুমাতে হবে নিদ্রা থেকে জাগ্রত হওয়ার পর অন্তর যে বিষয়টির প্রতি দৃঢ়ভাবে সায় দিবে, সেটিকেই মঙ্গলজনক মনে করতে হবে
যদি এক দিনে কিছুই অনুভব করা না যায় এবং মন কোন দিকেই সায় না দেয় তবে ক্রমাগত সাত দিন (প্রয়োজন হলে) আমল করলে ইনশাআল্লাহ সেই কাজের ভালোমন্দ সম্পর্কে অবশ্যই জানা যাবে [সুত্রঃ দুররে মুখতার]
যে কোন কাজে সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছার দুটি উপায়:
প্রথমতঃ আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের নিকট এস্তেখারা সালাতের মাধ্যমে কল্যাণ প্রার্থনা করা কারণ, তিনি অতীত, বর্তমান ভবিষ্যত সম্পর্কে সব চেয়ে ভাল জানেন তিনি সব চেয়ে চেয়ে বেশী জ্ঞাণ রাখেন মানুষের কল্যাণ কোথায় এবং কোন পথে নিহিত আছে
দ্বীতিয়তঃ অভিজ্ঞ, বিশ্বস্ত এবং জ্ঞানী লোকের পরামর্শ গ্রহণ করা আল্লাহ তায়ালা ব্যাপারে বলেন,
সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে তাদের সাথে পরামর্শ করুন ” [সূরা আলে ইমরান: ১৫৯]
এস্তেখারা প্রসঙ্গে লক্ষনীয় কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়:
) ছোট-বড় সকল বিষয়ে এস্তেখারা করার অভ্যাস গড়ে তোলা ভাল
) দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করুন, আল্লাহ আপনাকে যে কাজ করার তাওফীক দিয়েছেন তাতেই আপনার কল্যাণ নিহীত রয়েছে তাই একান্ত মনোযোগ সহকারে স্থীর চিত্তে এবং আল্লাহর মহত্ব বড়ত্বের কথা স্বরণ করে তার নিকট দুয়া করুন
) খুব তাড়াহুড়া বা একান্ত জরুরী প্রয়োজন না হলে যে সকল সময়ে সাধারণ নফল নামায পড়া নিষিদ্ধ সে সকল সময়ে সালাতুল এস্তেখারা আদায় করা থেকে বিরত থাকুন তবে তাড়াহুড়া থাকলে নিষিদ্ধ সময়গুলোতেও তা পড়া যাবে

) মহিলাদের ঋতু স্রাব বা সন্তান প্রসব জনিত রক্ত প্রবাহের সময় সালাতুল এস্তেখারা আদায় করা থেকে বিরত থাকতে হবে
তবে এমতাবস্থায় নামায না পড়ে শুধু এস্তেখারা দুয়াটি পড়া যাবে
) এস্তেখারা দুয়া মুখস্ত না থাকলে দেখে দেখে তা পড়তে অসুবিধা নেই তবে মুখস্ত করার চেষ্টা করা ভাল
) এস্তেখারা করার পর তার উদ্দিষ্ট বিষয়ে স্বপ্ন দেখা আবশ্যক নয় স্বপ্নের মাধ্যমেও সঠিক জিনিসটি জানতে পারে আবার স্বপ্ন ছাড়াও মনের মধ্যে সে কাজটির প্রতি আগ্রহ বা অনাগ্রহ তৈরি হতে পারে
) উক্ত বিষয়ে সিদ্ধান্তে উপনিত হলে আল্লাহর উপর ভরসা করে দৃঢ়ভাবে কাজে এগিয়ে যান পিছুপা হবেন না বা হীনমন্যতায় ভূগবেন না আল্লাহ তায়ালা বলেন: “আর যখন সিদ্ধান্ত গ্রহন করে ফেল তখন আল্লাহর উপর ভরসা কর”(সূরা আলে ইমরান: ১৫৯)
) সালাতুল এস্তেখারা পড়ার পরও সঠিক সিদ্ধান্তে উপণিত না হতে পারলে একধিকবার তা পড়া জায়েয আছে
) এস্তেখারা দুয়াতে যেন অতিরিক্ত কোন শব্দ যোগ না হয় বা সেখান থেকে কোন শব্দ বাদ না যায় সে দিকে লক্ষ্য রাখুন বরং হাদীসে বর্ণিত শব্দাবলী যথাযথভাবে পড়ার চেষ্টা করুন
১০) অনেকের মনে একটি প্রশ্ন দেখা দেয় আর তা হল: একাধিক বিষয়ের জন্য কি একবার এস্তেখারা করাই যথেষ্ট না প্রত্যেকটি বিষয়ের জন্য পৃথকভাবে করতে হবে ? এক্ষেত্রে বলব যে, প্রতিটি কাজের জন্য পৃথকভাবে এস্তেখারা করা উত্তম তবে একবার এস্তেখারা করে দুয়ায় সকল বিষয়ের নিয়ত করলেও যথেষ্ট হবে
১১) যে বিষয়ে আপনি সিদ্ধান্ত নিতে চান সি বিষয়ে অভিজ্ঞতা সম্পন্ন, সৎ বিশ্বস্ত ব্যক্তির পরামর্শ গ্রহণ করুন সেই সাথে সালাতুল এস্তেখারা আদায় করুন
১২) এক জনের পক্ষ থেকে আরেকজন সালাতুল এস্তেখারা আদায় করতে পারবে না তবে সাধারণভাবে তার কল্যাণের জন্য দুয়া করতে পারে যেমন, মা-বাবা তাদের সন্তানের কল্যাণের জন্য নামাযের বাইরে কিংবা নফল নামাযে সাজদাহ রত অবস্থায় এবং তাশাহুদের দুরুদ পাঠের পরে দুয়া করতে পারে
১৩) অন্যায় বা হারাম কাজে এমন কি মাকরূহ কাজেও এস্তেখারা করা জায়েজ নাই
একটি ভুল ধারণা : এস্তেখারার জন্য কি ঘুমাতে হয়?
এই আমল করার জন্য শরীয়তে নির্দিষ্ট কোনো সময় নেই রাত বা দিনের যেকোনো সময় তা করা যায় কিন্তু অনেকে মনে করে, এস্তেখারা জন্য ঘুমাতে হয় কিংবা রাত্রি বেলায় ঘুমানোর আগেই শুধু এস্তেখারা করা যায় আবার অনেকে মনে করে, স্বপ্ন দেখলেই এস্তেখারা পূর্ণ হবে আসলে এর কোনোটিই এস্তেখারা জরুরি কোনো বিষয় নয়; বরং রাত-দিনের যে সময় নামায পড়া যায় তখনই দুই রাকাত নামায নির্দিষ্ট দুআটি পড়ে এস্তেখারা করে নেওয়া যায়
তবে, রাতে করার ব্যাপারে একটু গুরুত্ব দেয়ার কারণটা হল, দিনে মানুষ সাধারণত ব্যস্ত থাকে তাই মন দিয়ে করাটা সবসময় সম্ভব হয়না আর রাতে সব কাজ সেরে মন দিয়ে আমলটা করতে পারা যায় স্বপ্নের ব্যাপারটাও হল এই, স্বপ্নে ব্যাপারটার পক্ষে বিপক্ষে কিছু দেখলে সিদ্ধান্ত নেয়াটা আপনার জন্য বেশি সহজ হবে আর এস্তেখারা করার পর না ঘুমানো হলে আপনার মন হয়ত যে কোন একদিকে ঝুঁকতে পারে কিন্তু এটা বুঝতেও আপনার বেগ পেতে হতে পারে (ব্যক্তিগত অভিমত এগুলি)
* পরিশেষে, বিপদাপদ বা দূর্ঘটনা ঘটলেই তাতে হাহুতাশ করার কারণ নেই কারণ, আমাদের জীবনে এমন ঘটনা ঘটে যা আমরা চাই না কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তার মধ্যেই আমাদের কল্যাণ নিহিত রয়েছে আবার অনেক সময় এমন কিছু আশা করি যার মধ্যে হয়ত কোন অকল্যাণ ক্ষতি অপেক্ষা করছে আমরা কেউই ভবিষ্যত সম্পর্কে জানি না

আল্লাহ তায়ালা বলেন, “তোমদের কাছে হয়তবা কোন একটা বিষয় পছন্দনীয় নয়, অথচ তা তোমাদের জন্য কল্যাণকর আর হয়তোবা কোন একটি বিষয় তোমাদের কাছে পছন্দনীয় অথচ তোমাদের জন্যে অকল্যাণকর বস্তুতঃ আল্লাহই জানেন, তোমরা জান না ” [সূরা বাকারা: ২১৬]

* এটি সংকলিত রচনা, কিছু নিজের কথাসহ (শুরুতে নিজের জন্য সংগ্রহ করা হয়েছিল) এবং স্বাভাবিকভাবেই এখানে ভুল থাকতে পারে, যদি কোন ভুল হয় তো দয়া করে দেখিয়ে দিবেন এবং সাথে সাথে আল্লাহ্ কাছেও মাফ চাই ভুল-ভান্তির জন্য আল্লাহ আমাদের সকলকে তার সন্তোষমূলক কাজ করার তাওফীক দান করুন এবং সকল জ্বীন ইনসানকে হেদায়াতের উপর ইস্তেখামাত থাকার তাওফীক দান করুন আমীন