Tuesday, July 1, 2014

সালাতুল আউয়াবিন

সালাতুল আউয়াবিন


bangladesh-moszidউত্তরানিউজ ডেস্ক: নফল ইবাদতগুলোর মধ্যে সালাতুল আউয়াবিন বা আউয়াবিনের নামাজ অন্যতম। অসংখ্য হাদিসে এ নামাজের বিশেষ ফজিলতের কথা বর্ণিত হয়েছে। আউয়াবিন শব্দের অর্থ হলো তাওয়াবি। অর্থাৎ তওবাকারী। প্রত্যাবর্তনকারী, অনুগত, আল্লাহর আনুগত্যের দিকে প্রত্যাবর্তনকারী। সুতরাং সালাতুল আউয়াবিন অর্থ অনুগত বান্দাদের নামাজ। সালাতুল আউয়াবিন কোন নামাজ তা নিয়ে আলেমদের মাঝে মতানৈক্য বিদ্যমান। এ সম্পর্কে প্রধানত দুটি মত পাওয়া যায়। মাগরিব ও এশার মধ্যবর্তী সময়ের নফল নামাজ, চাশতের নামাজ। অধিকাংশ ফেকাহবিদ সালাতুল আউয়াবিন বলতে মাগরিব ও এশার মধ্যবর্তী সময়ের নফল নামাজকে বুঝিয়েছেন। রঈসুল মুফাসসিরিন আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, আউয়াবিন হলো যে ব্যক্তি মাগরিব ও এশার মধ্যবর্তী সময়ে নামাজ আদায় করে। (লুবাবুত তাবিল ফি মাআলিমিত তানবিল, ৪র্থ খন্ড, পৃ. ২৫৩)। শুয়াবুল ঈমান কিতাবে আছে, ইবনে মুনকাদির মুরসাল সূত্রে বর্ণনা করেছেন, যে ব্যক্তি মাগরিব ও এশার মধ্যবর্তী সময়ে নামাজ আদায় করবে, নিশ্চয়ই তা আউয়াবিনের নামাজ। (কানজুল উম্মাল, হাদিস : ১৯২৯)। আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস (রা.) বলেন, সালাতুল আউয়াবিন হলো মাগরিব ও এশার মধ্যবর্তী নামাজ। এমনকি মানুষ এরপর এশার নামাজের জন্য দাঁড়িয়ে যায়। (আবদুল গনি মুকাদ্দেসি, আখবারুস সালাত, দামেস্ক, দারুস সানাবিল, খন্ড ১ম, পৃ. ৩২)।

সালাতুল আউয়াবিনের রাকাত সংখ্যা নিয়ে ফেকাহবিদদের মাঝে দুটি মত পাওয়া যায়। ছয় রাকাত নামাজ তিন সালামে, ২০ রাকাত নামাজ ১০ সালামে। আল বাহরুর রায়েক নামক কিতাবে রয়েছে, সালাতুল আউয়াবিন হলো দুই এশার (মাগরিব ও এশার) মধ্যবর্তী সময়ে তিন সালামে আদায়কৃত ছয় রাকাত নামাজ। আবুল বাকা বলেন, সালাতুল আউয়াবিনের নিয়তে ছয় রাকাত নামাজ পড়া হবে। আর প্রত্যেক রাকাতে সূরা ফাতেহার পর একবার সূরা কাফিরুন এবং তিনবার সূরা এখলাস পড়বে। একথা শায়েখ আবদুল্লাহ বুস্তামি বলেছেন। (আল বাহরুর রায়েক, দারুল মারিফ, ৪র্থ খন্ড, পৃ. ২৪৯)। রাউদুত তালিবের ব্যাখ্যাগ্রন্থ আসনাল মাতালিবে শাইখুল ইসলাম জাকারিয়া আনসারী বলেন, সালাতুল আউয়াবিন হলো মাগরিব ও এশার মাঝামাঝি সময়ে বিশ রাকাত নামাজ। (আসনাল মাতালিব শরহু বাউদুত তালিব, ১ম খন্ড, পৃ. ২০৬)। তবে অধিকাংশ আলেম ও মাশায়েখে তরিকত দুই দুই রাকাত করে ছয় রাকাত সালাতুল আউয়াবিন আদায় করে থাকেন।
সালাতুল আউয়াবিনের অনেক ফজিলতের কথা বর্ণিত আছে। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেছেন, মাগরিব নামাজের পর যে ব্যক্তি ছয় রাকাত নামাজ পড়বে এবং এর মাঝে কোনো খারাপ কথা বলবে না; এর বিনিময়ে সে ১২ বছরের ইবাদতের সওয়াব লাভ করবে। (তিরমিজি শরিফ : ৪৩৫)। অপর এক বর্ণনায় এসেছে যে, হজরত মুহাম্মদ ইবনে আম্মার ইবনে ইয়াসার বলেন, আমার পিতা আমার দাদা থেকে বর্ণনা করেন যে, আমি মাগরিবের পর আম্মার ইবনে ইয়াসারকে ছয় রাকাত নফল নামাজ পড়তে দেখে সে নামাজ সম্পর্কে প্রশ্ন করলে তিনি জবাবে বললেন, আমি আমার হাবিব রাসূলুল্লাহকে মাগরিবের পর ছয় রাকাত নামাজ পড়তে দেখেছি এবং তিনি বলেছেন, যে ব্যক্তি মাগরিবের নামাজের পর ছয় রাকাত নফল নামাজ আদায় করবে তার গোনাহগুলো ক্ষমা করে দেয়া হবে, যদিও তা সমুদ্রের ফেনা পরিমাণ হয়। (আল মুজামুস সগির : ৯০০)। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত মাগরিব ও এশার মধ্যবর্তী সময়ে নফল নামাজ আদাকারীকে ফেরেশতা পরিবেষ্টন করে রাখেন। আর এটাই হচ্ছে আউয়াবিনের নামাজ। (কানজুল উম্মাল : ২১৮৩৯)। হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) এরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি মাগরিবের পরে ২০ রাকাত নফল নামাজ আদায় করবে আল্লাহতায়ালা তার জন্য বালাখানা নির্মাণ করবেন। (তিরমিজি শরিফ : ৬০৪)।
হজরত আবু বকর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যে ব্যক্তি মাগরিবের নামাজের পর কথাবার্তা বলার আগে দুই রাকাত নামাজ আদায় করবে আল্লাহ তায়ালা জান্নাতের প্রাঙ্গণে তাকে জায়গা করে দেবেন। আর যদি চার রাকাত আদায় করে তবে সে একটি হজ আদায়কারীর সওয়াব পাবে। আর যদি ছয় রাকাত আদায় করে তবে ৫০ বছরের (ছগিরা) গোনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে।
(কানজুল উম্মাল : ১৯৪৫৩)।
সূত্র - http://uttaranews24.com

0 comments:

Post a Comment