দুনিয়ার দুঃখ দুঃখই না, জাহান্নামের দুঃখই আসল দুঃখ
প্রতিটি জীবকে মরতে হবে, আমি চাই বা না চাই, এদুনিয়া ছেড়ে যেতেই হবে, আসুন দুনিয়ায় থেকে আসল জিন্দিগি কবর, হাশর ও জান্নাতের পাথেয় সংগ্রহ করি।
দুনিয়ার সুখ সুখ না, জান্নাতের সুখই আসল সুখ
হযরত আনাস ইবনে মালেক (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি আমাকে দেখেছে এবং আমার উপর ঈমান এনেছে তার জন্য তো একবার মোবারকবাদ। আর যে আমাকে দেখে নাই তারপরেও আমার উপর ঈমান এনেছে তাকে বারবার মোবারকবাদ - মুসনাদ আহমাদঃ ৩/১০০
কালেমা পড়ি, ঈমান আনি, বলি আমি মুসলিম
“ তোমরাই শ্রেষ্ঠ উম্মত, মানুষের(কল্যাণের) জন্য তোমাদেরকে বের করা হয়েছে। তোমরা মানুষকে সৎ কাজের আদেশ করবে এবং অসৎকাজ থেকে নিষেধ করবে।” -সূরা আল-ইমরান, আয়াত-১১০
দুনিয়া ক্ষনস্থায়ী, নিশ্চই আমিও দুনিয়ায় ক্ষনস্থায়ী
“ রাসুলে পাক (সা:) বলেছেন, আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমার উম্মতের উপর সর্বপ্রথম নামাজ ফরজ করেছেন এবং কেয়ামতের দিন সবার আগে নামাজের হিসাব নয়া হবে।ে।” -সূরা আল-ইমরান, আয়াত-১১০
নামাজ বেহেস্তের চাবি
হযরত আনাস ইবনে মালেক (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি আমাকে দেখেছে এবং আমার উপর ঈমান এনেছে তার জন্য তো একবার মোবারকবাদ। আর যে আমাকে দেখে নাই তারপরেও আমার উপর ঈমান এনেছে তাকে বারবার মোবারকবাদ - মুসনাদ আহমাদঃ ৩/১০০
Tuesday, July 1, 2014
এশরাকের নামাজ
আলী (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি ফজরের নামাজ আদায় করে স্বীয় স্থানে বসে থাকে, তার জন্য ফেরেশতারা ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকেন। তারা এভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করেন, হে আল্লাহ, তাকে ক্ষমা করুন; হে আল্লাহ, তার প্রতি দয়া করুন। আর যে নামাজের অপেক্ষায় থাকে তার জন্যও ফেরেশতারা ক্ষমা প্রার্থনায় রত থাকেন। তারা এভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করেন, হে আল্লাহ, তাকে ক্ষমা করুন; হে আল্লাহ, তার প্রতি দয়া করুন। (মুসনাদে আহমদ)। হাদিস শরিফে বর্ণিত এশরাকের নামাজ আদায়ের বিভিন্ন ফজিলত।
সালাতুল আউয়াবিন
সালাতুল আউয়াবিন
সালাতুল আউয়াবিনের রাকাত সংখ্যা নিয়ে ফেকাহবিদদের মাঝে দুটি মত পাওয়া যায়। ছয় রাকাত নামাজ তিন সালামে, ২০ রাকাত নামাজ ১০ সালামে। আল বাহরুর রায়েক নামক কিতাবে রয়েছে, সালাতুল আউয়াবিন হলো দুই এশার (মাগরিব ও এশার) মধ্যবর্তী সময়ে তিন সালামে আদায়কৃত ছয় রাকাত নামাজ। আবুল বাকা বলেন, সালাতুল আউয়াবিনের নিয়তে ছয় রাকাত নামাজ পড়া হবে। আর প্রত্যেক রাকাতে সূরা ফাতেহার পর একবার সূরা কাফিরুন এবং তিনবার সূরা এখলাস পড়বে। একথা শায়েখ আবদুল্লাহ বুস্তামি বলেছেন। (আল বাহরুর রায়েক, দারুল মারিফ, ৪র্থ খন্ড, পৃ. ২৪৯)। রাউদুত তালিবের ব্যাখ্যাগ্রন্থ আসনাল মাতালিবে শাইখুল ইসলাম জাকারিয়া আনসারী বলেন, সালাতুল আউয়াবিন হলো মাগরিব ও এশার মাঝামাঝি সময়ে বিশ রাকাত নামাজ। (আসনাল মাতালিব শরহু বাউদুত তালিব, ১ম খন্ড, পৃ. ২০৬)। তবে অধিকাংশ আলেম ও মাশায়েখে তরিকত দুই দুই রাকাত করে ছয় রাকাত সালাতুল আউয়াবিন আদায় করে থাকেন।
সালাতুল আউয়াবিনের অনেক ফজিলতের কথা বর্ণিত আছে। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেছেন, মাগরিব নামাজের পর যে ব্যক্তি ছয় রাকাত নামাজ পড়বে এবং এর মাঝে কোনো খারাপ কথা বলবে না; এর বিনিময়ে সে ১২ বছরের ইবাদতের সওয়াব লাভ করবে। (তিরমিজি শরিফ : ৪৩৫)। অপর এক বর্ণনায় এসেছে যে, হজরত মুহাম্মদ ইবনে আম্মার ইবনে ইয়াসার বলেন, আমার পিতা আমার দাদা থেকে বর্ণনা করেন যে, আমি মাগরিবের পর আম্মার ইবনে ইয়াসারকে ছয় রাকাত নফল নামাজ পড়তে দেখে সে নামাজ সম্পর্কে প্রশ্ন করলে তিনি জবাবে বললেন, আমি আমার হাবিব রাসূলুল্লাহকে মাগরিবের পর ছয় রাকাত নামাজ পড়তে দেখেছি এবং তিনি বলেছেন, যে ব্যক্তি মাগরিবের নামাজের পর ছয় রাকাত নফল নামাজ আদায় করবে তার গোনাহগুলো ক্ষমা করে দেয়া হবে, যদিও তা সমুদ্রের ফেনা পরিমাণ হয়। (আল মুজামুস সগির : ৯০০)। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত মাগরিব ও এশার মধ্যবর্তী সময়ে নফল নামাজ আদাকারীকে ফেরেশতা পরিবেষ্টন করে রাখেন। আর এটাই হচ্ছে আউয়াবিনের নামাজ। (কানজুল উম্মাল : ২১৮৩৯)। হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) এরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি মাগরিবের পরে ২০ রাকাত নফল নামাজ আদায় করবে আল্লাহতায়ালা তার জন্য বালাখানা নির্মাণ করবেন। (তিরমিজি শরিফ : ৬০৪)।
হজরত আবু বকর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যে ব্যক্তি মাগরিবের নামাজের পর কথাবার্তা বলার আগে দুই রাকাত নামাজ আদায় করবে আল্লাহ তায়ালা জান্নাতের প্রাঙ্গণে তাকে জায়গা করে দেবেন। আর যদি চার রাকাত আদায় করে তবে সে একটি হজ আদায়কারীর সওয়াব পাবে। আর যদি ছয় রাকাত আদায় করে তবে ৫০ বছরের (ছগিরা) গোনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে।
(কানজুল উম্মাল : ১৯৪৫৩)।
সূত্র - http://uttaranews24.com
তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলত
তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলত
আল্লাহ আমাদের সৃষ্টি করেছেন, আলো, বাতাস পানি দিয়ে লালন-পালন করে যাচ্ছেন- সে কারণে তার বান্দা হিসেবে প্রতিদিন obligatory duty হিসেবে ফরজ সালাত আদায় করতে হবে। বান্দা হিসেবে দৈনিক পাঁচবার হাজিরা দেয়ার জন্য ফরজ সালাত পড়তে হবে। ফরজ সালাতের বাইরে রয়েছে আরো অনেক ধরনের সালাত যেমন সুন্নাত, ওয়াজিব,মুস্তাহাব, সুন্নাতে মুয়াক্কাদা, সুন্নাতে জায়িদাহ, চাশতের সালাত, ইশরাকের সালাত, সালাতুত তসবিহ, সালাতুত তওবা,তাহাজ্জুদের সালাত, ইসতিখারার সালাত ইত্যাদি। এসব সালাতের বিভিন্ন মর্যাদা রয়েছে। তবে এর মধ্যে সর্বোত্তম ও সর্বোৎকৃষ্ট সালাত হচ্ছে সালাতুত তাহাজ্জুদ। তাহাজ্জুদের নামাজ নবী করিম সাঃ-এর ওপর ফরজ ছিল।
উম্মতের ওপর এটি ফরজ না হলেও সব সুন্নাত নামাজের মধ্যে এটিই উত্তম। তাহাজ্জুদ অর্থ ঘুম থেকে জাগা আর তাহাজ্জুদের সময় হলো ইশার নামাজ পড়ে ঘুমিয়ে তারপর অর্ধেক রাতের পর নামাজ আদায় করা। সুবহে সাদিকের আগ পর্যন্ত তাহাজ্জুদের ওয়াক্ত থাকে। গভীর রাতে ঘুম থেকে জেগে নামাজ আদায়ে সাওয়াব বেশি। পবিত্র মক্কা ও মদিনায় হারামাইন শারফাইন ও তাহাজ্জুদের সালাতের জন্য আজান দেয়া হয় এবং অতি গুরুত্বের সাথে আদায় করা হয়। পবিত্র কালামে পাকে এরশাদ হয়েছে, যারা শেষ রাতে ইবাদাত ও প্রার্থনা করেন তাদের প্রশংসাস্বরূপ কিয়ামত দিবসে বলবেনঃ ‘তারা রাতের সামান্য অংশই নিদ্রায় অতিবাহিত করত এবং রাতের শেষ প্রহরে তারা ক্ষমা প্রার্থনা করত। (সূরা) আযযারিয়াত আয়াত (১৭-১৮)
রাসূল সাঃ-কে সম্বোধন করে পবিত্র কুরআনে আল্লাহ পাক আরো বলেন, ‘এবং রাতের কিছু অংশ তাহাজ্জুদ পড়তে থাকুন। এ আপনার এক অতিরিক্ত কর্তব্য। আশা করা যায়, আপনার প্রভু আপনাকে মাকামে মাহমুদে অধিষ্ঠিত করবেন। (সূরা আল ঈসরা আয়া ৭৯) তানভীরুল মিশকাত গ্রন্থের প্রণেতা ঈমান মহিউস সুন্নাহ বাগবী রাঃ তিরমিজি শরিফের বরাত দিয়ে উল্লেখ করেন হজরত আবু উমামাহ সাঃ ফরমায়েছেনঃ ‘তোমরা রাত জেগে (তাহাজ্জুদ) নামাজ পড়াকে বাধ্যতামূলক করে লও।’ হাদিস নং ১১৫৭/২
তাহাজ্জুদ নামাজ নফসের রিয়াজাত ও তরবিয়াতের এক বিশেষ মাধ্যম। কারণ তখন সুখশয্যা ত্যাগ করেই ইবাদতে মশগুল হতে হয়। এটি মন ও চরিত্রকে নির্মল ও পবিত্র করা এবং সত্য পথে অবিচল রাখার জন্য অপরিহার্য ও অতীব কার্যকর পন্থা। আল কুরআনের সূরা মুজ্জামিলে এর উল্লেখ করা হয়েছে ‘অবশ্যি রাতে ঘুম থেকে ওঠা মনকে দমিত করার জন্য কুব বেশি কার্যকর এবং সে সময়ের কুরআন পাঠ বা জিকর একেবারে যথার্থ।’ (আয়াতঃ ৬ সূরা আল ফুরকান-এর ৬৪ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে ‘আল্লাহর প্রিয় বান্দা তারা, যারা তাদের রবের দরবারে সিজদা করে এবং দাঁড়িয়ে থেকেই রাত কাটিয়ে দেয়।’- ইসলামের প্রাথমিক যুগে কুফর সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে মুসলমানদের বিজিত হওয়ার পেছনে মূল ভূমিকা ছিল যে, তারা রাতের শেষ ভাগে আল্লাহতায়ালার মহান দরবারে চোখের পানি ফেলতেন এবং ক্ষমা প্রার্থনা করতেন। ‘তারা ছিল কঠিন পরীক্ষায় পরম ধৈর্যশীল, অটল-অবিচল, সত্যের অনুসারী,পরম অনুগত। আল্লাহর পথে ধন-সম্পদ উৎসর্গকারী এবং রাতের শেষ প্রহরে আল্লাহর কাছে এবং ভুলত্রুটির ক্ষমাপ্রার্থী। (সূরা আলে ইমরান আয়াত ১৭)
হাদিস শরিফেও তাহাজ্জুদের গুরুত্বের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। মিশকাতুল মাসাবিহ গ্রন্থকার সুনানে আহমদের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, “আবু হোরায়রা রাঃ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমি রাসূলুল্লাহ সাঃ-কে বলতে শুনেছি। আফজালুস সালাতি বাদাল মাফরুদাতি সালাতুল লাইলি” অর্থাৎ ফরজ নামাজের পর সবচেয়ে উত্তম নামাজ হলো তাহাজ্জুদের নামাজ। হাদিস নম্বর ১১৬৭/২। হজরত আবু হোরায়রা রাঃ হতে বর্ণিত অপর এক হাদিসে রাসূল সাঃ ফরমায়েছেন, ‘আল্লাহ প্রতি রাতেই নিকটবর্তী আসমানে অবতীর্ণ হন যখন রাতের শেষ তৃতীয় ভাগ অবশিষ্ট থাকে। তিনি তখন বলতে থাকেন কে আছো যে আমায় ডাকবে, আর আমি তার ডাকে সাড়া দেবো? কে আছো যে আমার কাছে কিছু চাইবে,আর আমি তাকে তা দান করব? কে আছো যে আমার কাছে ক্ষমা চাইবে আর আমি তাকে ক্ষমা করব? (বুখারি ও মুসলিম)-
শরহে সুন্নাহর বরাত দিয়ে মিশকাতুল মাসাবিহ গ্রন্থকার আবু সাঈদ খুদরি রাঃ বর্ণিত একটি হাদিসের উল্লেখ করেন। বলা হয়েছে, ‘রাসূল সাঃ ফরমায়েছেন তিন ব্যক্তির প্রতি আল্লাহ খুশি হন (হাসেন) এক. যে ব্যক্তি তাহাজ্জুদের জন্য ওঠেন এবং নামাজ পড়েন। দুই. জনতা, যারা নামাজের জন্য সারিবদ্ধভাবে দাঁড়ায়। তিন. মুজাহিদ যারা আল্লাহর পথে যুদ্ধ করার জন্য সারিবদ্ধভাবে দাঁড়ায়। (হাদিস নম্বর ১১৬০/২)
অনুরূপ অন্য আরেকটি হাদিস রয়েছে, হজরত জাবির রাঃ বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাঃ-কে বলতে শুনেছি। রাতের মধ্যে এমন একটি মুহূর্ত আছে যদি কোনো মুসলমান তা লাভ করে এবং আল্লাহর কাছে ইহ ও পরকালের কোনো কল্যাণ চায় আল্লাহ নিশ্চয়ই তাকে তা দেন। (মুসলিম)
উপরিউক্ত কুরআন ও হাদিসের বিশ্লেষণ করলে বোঝা যায় যে, সালাতসমূহের মধ্যে তাহাজ্জুদ অতি মর্যাদাকর সালাত। এই সালাত প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর পক্ষেই চড়থধয়মধপ করা উচিত। এই সালাতের মাধ্যমে হয়তো আল্লাহর নৈকট্য লাভ সহজ হবে। সৃষ্টিকর্তার সাথে যখন দূরত্ব কমে যাবে তখন সৃষ্টিকর্তা বান্দার দাবি রক্ষা করতে পারেন।
সূত্র - http://sodeshbangla.wordpress.com
চাশতের সালাতের ফজিলত
চাশতের সালাতের (সালাতুল দুহা) ফজিলত
অনুবাদঃ মোছতানছের বিল্লাহ | সম্পাদনাঃ আবদ্ আল-আহাদ
বুরাইদা (রা) বলেন,
রাসূলুল্লাহ্ (সা) বলেছেন, “মানুষের শরীরে ৩৬০ টি জোড় রয়েছে। অতএব মানুষের কর্তব্য হল প্রত্যেক জোড়ের জন্য একটি করে সদাকা করা।” সাহাবায়ে কেরাম (রা) বললেন, “ইয়া রাসূলুল্লাহ্! কার শক্তি আছে এই কাজ করার?” তিনি (সা) বললেন, “মসজিদে কোথাও কারোর থুতু দেখলে তা ঢেকে দাও অথবা রাস্তায় কোন ক্ষতিকারক কিছু দেখলে সরিয়ে দাও। তবে এমন কিছু না পেলে, চাশতের দুই রাকা’আত সালাতই এর জন্য যথেষ্ট।” [আবু দাউদ; কিতাবুল ‘আদাব’, অধ্যায়ঃ ৪১, হাদীস নং:৫২২২]
আবু হোরাইরা (রা) বলেন,
“আমার বন্ধু [মুহাম্মাদ (সা)] আমাকে তিনটি বিষয় আমল করার উপদেশ দিয়েছেনঃ প্রতি মাসের প্রথম তিন দিন রোজা রাখা; চাশতের সালাত (সালাতুদ্ দুহা) আদায় করা এবং ঘুমাতে যাওয়ার পূর্বে বিতরের সালাত আদায় করা।”[সহীহ্ আল বুখারী; “তাহাজ্জুদ” অনুচ্ছেদ, অধ্যায়ঃ ২, হাদীস নং:২৭৪ এবং সহীহ্ মুসলিম; কিতাবুস্ সালাত, অধ্যায়ঃ ৪, হাদীস নং:১৫৬০]
আবু সাঈদ (রা) হতে বর্ণিত,
“রাসূল (সা) ততক্ষন পর্যন্ত চাশতের সালাত পড়তে থাকতেন, যতক্ষনে আমরা ভাবতে শুরু করাতাম যে তিনি (সা) এই সালাত আর কখনো বাদ দেবেন না।আবার যখন এই সালাত আদায় করা বন্ধ রাখতেন, আমরা ভাবতাম হয়ত তিনি এই সালাত আর কখনই আদায় করবেন না।” (তিরমিযি)
ইশরাক্ক ও চাশ্তের সালাত আদায়ের উপযুক্ত সময়ঃ
“ইশরাক্ক সালাত শুরু থেকেই চাশতের সালাত হিসেব আদায় হয়ে আসছে।” [ মাজমূ’ ফাতাওয়াহ্ আল শেইখ ইবন বাজ্, ১১/৪০১ ]
শেইখ ইবন ঊসাইমীন (র) এর মতে,
” চাশতের সালাত আদায়ের সময় হল সূর্য উঠার ১৫ মিনিট পর থেকে শুরু করে যোহর সালাতের ১০ মিনিট পূর্ব পর্যন্ত।” [ আল-শারহ্ আল-মুম্তি, ৪/১২২ ]
“এই সালাত (চাশতের সালাত) আদায়ের উত্তম সময় হচ্ছে তখন, যখন সূর্যের তাপ এতোটা প্রখর যে, সদ্য প্রাপ্তবয়স্ক উটও সেই তাপ অনুভব করতে পারে।”[সহীহ্ মুসলিম; কিতাবুস্ সালাত, অধ্যায়ঃ ৪, হাদীস নং:১৬৩০]
সুস্থতার জন্য নামাজ
সুস্থতার জন্য নামাজ
জানা যায়, একজন চিকিৎসক নিয়মিত নামাজ আদায় করে সুস্থ হলেন। এ ঘটনা থেকে চিকিৎসক শিক্ষা নিলেন এবং তার প্রত্যেক মুসলিম রোগীকে যারা চলাফেরায় সক্ষম তাদের নামাজ পড়তে বললেন। এভাবে তার বেশিরভাগ রোগী আরোগ্য লাভ করতে লাগল। নামাজ দ্বারা যেসব রোগ নিরাময় হয় ডাক্তার তার একটি তালিকা তৈরি করলেন। সে তালিকায় দেখা গেল, নামাজ দ্বারা ৮টি রোগ থেকে মুসলিম জাতি মুক্তি লাভ করতে পারে। সেগুলো হলো- ১. মানসিক রোগ ২. স্নায়ুবিক রোগ যা বর্তমান সময়ে বেড়ে গেছে আর দেশে ভালো নিউরোলজিস্টের দারুণ সঙ্কট ৩. অস্থিরতা ৪. মনস্তাত্তি্বক রোগ ৫. হার্টের রোগ ৬. জোড়ার ব্যথা ৭. ইউরিক এসিড থেকে সৃষ্ট রোগ এবং ৮. পাকস্থলী ও আলসারের রোগ।
এ তালিকা তৈরি করেছেন একজন বিখ্যাত ফিজিশিয়ান, কোনো মৌলবি নন। তাই ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে নামাজ পড়লে আল্লাহ খুশি হবেন, আমরা বেহেশত পাব, আর নামাজ না পড়লে কবর আজাব হবে এবং আখেরাতে জাহান্নামে যাব, এটা ভাবলেও চিকিৎসাশাস্ত্রে এর প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব প্রমাণিত।
সবশেষে ইউরোপের এক ব্যক্তির ভ্রমণ কাহিনীর কিছু বিবরণ তুলে ধরছি। সেই ব্যক্তি লিখেছেন, আমি একদিন নামাজ পড়ছিলাম আর এক ইংরেজ দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে তা দেখছিল। আমার নামাজ পড়া শেষ হলে সে আমাকে বলতে লাগল, 'তুমি এখন যেভাবে ব্যায়াম করলে তা নিশ্চয়ই আমার লেখা বই থেকে জেনেছ। কেননা, আমি এ নিয়মে ব্যায়ামের পদ্ধতি লিখেছি।' তখন সেই ব্যক্তি ওই ইংরেজকে বললেন, আমি তো মুসলমান, আমার ধর্ম ইসলাম আমাকে রোজ পাঁচবার এভাবে ধর্মীয় কাজ করার আদেশ দিয়েছেন। আমি আপনার কোনো ব্যায়ামের বই পড়িনি। সেই ইংরেজ ব্যক্তি তখন অবাক হয়ে বলল, যে ব্যক্তি এ পদ্ধতিতে রোজ ব্যায়াম করবে সে কখনও দীর্ঘমেয়াদি, জটিল, মারাত্মক রোগে আক্রান্ত হবে না। ওই ইংরেজ তখন ইসলাম ধর্মের বিভিন্ন বিষয়ে ধারণা নিতে লাগল।
অমুসলিমরা যে পদ্ধতিকে স্বীকার করে ব্যায়াম হিসেবে, আমরা সেই নামাজকে তেমন গুরুত্ব দিই না। অনেক সময় যানবাহনে চলার সময় বা ছোট বাচ্চা প্রস্রাব করে কাপড় নষ্ট করলে হয়তো শরীর না ধুয়ে নামাজ পড়া যায় না, কিন্তু ইচ্ছাকৃতভাবে নামাজ কাজা করা উচিত নয়। কারণ শুধু সওয়াব অর্জনের জন্য নয়, নামাজ যে সর্বশ্রেষ্ঠ শরীরচর্চা এটা বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত। তাই নামাজ পড়ুন, শরীরকে সুস্থ রাখুন, কারণ সুস্থতা আল্লাহর শ্রেষ্ঠ নেয়ামত।